গ্রামীণ বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে চামচ ব্যবহার করে কিডনি সুস্থ আছে কিনা তা পরীক্ষা করার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি রয়েছে, যদিও এটি কোনো বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসাগতভাবে প্রমাণিত পদ্ধতি নয়। এটি কেবল একটি প্রাথমিক ইঙ্গিত দিতে পারে, এবং কোনোভাবেই ডাক্তারি পরীক্ষার বিকল্প নয়।
এই পদ্ধতিটি মূলত আপনার মুখের লালা এবং তার গন্ধ, রঙ বা দাগের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি যেভাবে করা হয়:
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
* একটি পরিষ্কার চামচ (ধাতব চামচ ভালো)
* একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের প্যাকেট বা জিপলক ব্যাগ
* একটি টেবিল ল্যাম্পের আলো বা সরাসরি সূর্যের আলো
পরীক্ষার পদ্ধতি:
১. সকালে খালি পেটে: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, দাঁত ব্রাশ না করে বা কিছু না খেয়ে এই পরীক্ষাটি করুন। এমনকি জলও পান করবেন না।
২. লালা সংগ্রহ: চামচটির পেছনের অংশ (যে অংশ দিয়ে খাবার তোলা হয় না) আপনার জিভের উপর ভালোভাবে ঘষুন, যাতে প্রচুর পরিমাণে লালা চামচে লাগে। জিভের গোড়া থেকে সামনের দিকে ভালো করে ঘষবেন।
৩. প্যাকেটে রাখুন: লালা মাখা চামচটি সাবধানে একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের প্যাকেটের মধ্যে রাখুন।
৪. আলোতে রাখুন: প্যাকেটসহ চামচটি এক মিনিটের জন্য টেবিল ল্যাম্পের আলোতে বা সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখুন। তাপ লালার গন্ধ এবং দাগ পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।
৫. পর্যবেক্ষণ: এক মিনিট পর প্যাকেট থেকে চামচটি বের করে মনোযোগ দিয়ে দেখুন এবং শুঁকে দেখুন:
* **যদি চামচে কোনো গন্ধ না থাকে এবং কোনো দাগ না পড়ে:** এর অর্থ হতে পারে আপনার দেহের ভিতরের অঙ্গগুলো মোটামুটি সুস্থ আছে।
* **যদি তীব্র বা ঝাঁঝালো অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ বের হয়:** এটি কিডনি সমস্যার একটি সম্ভাব্য ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ কিডনি সঠিকভাবে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ (যেমন ইউরিয়া) বের করতে না পারলে সেগুলি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে।
* **যদি মিষ্টি বা ফলের মতো গন্ধ বের হয়:** এটি ডায়াবেটিসের (রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি) সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে।
* **যদি সাদা বা হালকা হলুদ দাগ থাকে:** এটি থাইরয়েডের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
* **যদি কমলা রঙের দাগ থাকে:** কিছু ক্ষেত্রে এটিও কিডনি রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
* **যদি বেগুনি রঙের দাগ থাকে:** এটি বুকে সর্দি জমা বা উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
* এটি কোনো চিকিৎসা পরীক্ষা নয়: বারবার বলা হচ্ছে, এই পরীক্ষাটি শুধুমাত্র একটি ঘরোয়া পদ্ধতি এবং এটি কোনো রোগের নিশ্চিত প্রমাণ দেয় না। এটি কেবলমাত্র একটি প্রাথমিক ইঙ্গিত।
* ডাক্তারি পরামর্শ জরুরি: যদি এই পরীক্ষায় কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায় বা আপনার কিডনি রোগের অন্য কোনো উপসর্গ (যেমন ক্লান্তি, প্রস্রাবে পরিবর্তন, ফোলা ভাব ইত্যাদি) থাকে, তাহলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। শুধুমাত্র ডাক্তারই সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার (যেমন রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি) মাধ্যমে কিডনি রোগের সঠিক কারণ ও অবস্থা নির্ণয় করতে পারবেন এবং যথাযথ চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারবেন।
এই পদ্ধতিটি কেবল আপনার শরীর সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পেতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সর্বদা পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শ অপরিহার্য।
Post a Comment