ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যৌন মিলনকে নিষিদ্ধ বা হারাম করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত স্বাস্থ্য, নৈতিকতা এবং পারিবারিক পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে আরোপিত হয়েছে। নিচে ৪ ধরনের নিষিদ্ধ মিলনের বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
১. মাসিকের সময় (হায়েয) এবং সন্তান প্রসবের পর রক্তপাতের সময় (নিফাস): ইসলামে মাসিকের সময় (হায়েয) এবং প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণের (নিফাস) সময় স্ত্রী সহবাস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোরআন শরীফে আল্লাহ তা’আলা বলেন: “তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে ঋতুস্রাব সম্পর্কে। বলো, তা কষ্টদায়ক। সুতরাং তোমরা ঋতুস্রাবকালে স্ত্রী থেকে দূরে থাকো এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না। যখন তারা পবিত্র হবে, তখন তাদের নিকট সেইভাবে গমন করো, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদেরকে এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালোবাসেন।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২)
এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হলো:
শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত: এই সময়ে নারীর শরীর দুর্বল থাকে এবং সংক্রমণ বা স্বাস্থ্যগত জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ধর্মীয় পবিত্রতা: এটি ধর্মীয় বিধান এবং পবিত্রতার একটি অংশ।
২. পায়ুপথে সহবাস: ইসলামে পায়ুপথে যৌন মিলন (Anal Intercourse) কঠোরভাবে হারাম। এই কাজটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এবং স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে বিবেচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই কাজের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি কোনো নারীর পায়ুপথে গমন করে, আল্লাহ তার দিকে ফিরেও তাকান না।” (আহমাদ, নাসায়ী)।
এর কারণ:
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি: এটি বিভিন্ন রোগ এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রাকৃতিক বিধানের লঙ্ঘন: এটি প্রজনন পদ্ধতির প্রাকৃতিক উদ্দেশ্যকে লঙ্ঘন করে।
৩. স্ত্রীর প্রতি জুলুম বা জোরপূর্বক মিলন: ইসলামে স্ত্রীকে জোরপূর্বক সহবাসে বাধ্য করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইসলাম বৈবাহিক সম্পর্ককে পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্মান এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে স্থাপন করতে নির্দেশ দেয়। জোরপূর্বক মিলনকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি ইসলামি শরীয়াহতে একটি গুরুতর অপরাধ।
৪. যৌন অঙ্গ ছাড়া অন্য অঙ্গের মাধ্যমে তৃপ্তি লাভ (কিছু ক্ষেত্রে): এই বিষয়ে মতভেদ থাকলেও বেশিরভাগ ইসলামি পণ্ডিতের মতে, মুখের মাধ্যমে যৌনাঙ্গে তৃপ্তি লাভ করা (Oral Sex) মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। যদিও এটি সম্পূর্ণ হারাম নয়, তবে এটি পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গুরুত্বপূর্ণ কথা:
ইসলামে বৈবাহিক সম্পর্ককে একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে দেখা হয়, যেখানে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, দয়া এবং সম্মান প্রদর্শন করবে। উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত এই সম্পর্কের পবিত্রতা, স্বাস্থ্য এবং নৈতিকতা রক্ষার জন্যই প্রণীত হয়েছে। কোনো বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানতে হলে অবশ্যই বিজ্ঞ আলেম বা নির্ভরযোগ্য ইসলামি স্কলারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
Post a Comment