নেপথ্যে আসলে কে

 


গোপালগঞ্জে সম্প্রতি ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে হামলা ও সহিংসতা হয়েছে, তার নেপথ্যে বেশ কিছু অভিযোগ ও ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এর কারণ ও নেপথ্যের ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
মূল অভিযোগ:
 * আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সম্পৃক্ততা: এনসিপির অভিযোগ, গোপালগঞ্জে তাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় 'জয় বাংলা' স্লোগান দেওয়া হয়েছে এবং হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সমর্থক ছিল।
 * নির্দেশনা ও উস্কানি: দ্য ডেইলি নওরোজ এবং অন্যান্য সূত্রের খবরে দাবি করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি প্রতিহত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এতে শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে কিছু অডিও বার্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি এনসিপিকে গোপালগঞ্জে ঢুকতে না দেওয়া এবং তাদের কর্মসূচি পণ্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি পলাতক সাদ্দাম হোসেন ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি হামলার নির্দেশনা দেন বলেও অভিযোগ আছে।
 * টুঙ্গিপাড়ায় হামলা পরিকল্পনার গুজব: হামলাকারীদের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে এনসিপি টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার ভাঙচুর করবে। এই গুজব উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 * সাংগঠনিক দুর্বলতা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা: কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এনসিপি গোপালগঞ্জে হামলার মুখে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি, যা তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন যে গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটতো না, যা গোয়েন্দা ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে।
হামলার ঘটনাপ্রবাহ:
 * গত ১৬ জুলাই (২০২৫) গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) "জুলাই পদযাত্রা" কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
 * এনসিপির সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই হামলাকারীরা তাদের সমাবেশস্থলে ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়।
 * সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরেও কয়েক দফা গুলি ও বোমা হামলা চালানো হয়।
 * হামলাকারী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
 * এই ঘটনায় অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন (রমজান মুন্সি, দীপ্ত সাহা, রমজান কাজী, ইমন তালুকদার, সোহেল মোল্লা) এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
আইনি পদক্ষেপ:
 * পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৪০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
 * হামলার ঘটনায় প্রায় ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
 * পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
সংক্ষেপে, গোপালগঞ্জের হামলার নেপথ্যে মূলত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পেছনে এনসিপির কর্মসূচি প্রতিহত করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে গুজব ও উত্তেজনার মতো বিষয়গুলোও ভূমিকা রেখেছে।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post