উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: দুপুরে বোনের দাফন, রাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু

 

রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দগ্ধ হওয়া ভাই-বোন নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম (১৩) ও আরিয়া নাশরাফ নাফি (৯) দুজনই মারা গেছেন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মৃত্যু হয় নাজিয়ার ছোট ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফির। এর আগে, সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মৃত্যু হয় নাফির বড় বোন নিঝুমের। মঙ্গলবার দুপুরে নিঝুমের জানাজা নামাজ শেষে উত্তরার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ছোট ভাই নাফির মৃত্যুর খবর আসে। দুই সন্তানের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা।


নিহত নিঝুম ও নাফির গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ জয়নগর গ্রামে। তাদের বাবার নাম আশরাফুল ইসলাম নিরব। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় থাকতেন তারা।

নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং তার ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি ওই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্বজনরা জানান, সোমবার দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন লাগার সময় স্কুল চত্বরেই ছিল নিঝুম ও নাফি। আগুনে তারা গুরুতর দগ্ধ হয়। নিঝুমের শরীরের বড় একটি অংশ পুড়ে গেলে তাকে দ্রুত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ছোট ভাই নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে একই হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনিও মৃত্যুর কাছে হার মানেন।

তারা আরও জানান, গতকাল রাতে নিঝুম মারা যাওয়ার পর তার লাশ গ্রামের বাড়ি ভোলায় নেওয়ার কথা থাকলেও তার ভাই চিকিৎসাধীন থাকায় লাশ ভোলায় নেওয়া হয়নি। দুপুরে নিঝুমের জানাজা নামাজ শেষে উত্তরার কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর কিছু সময় পর রাতে তার ভাই নাফির মৃত্যু হয়।

এদিকে দুই ভাই-বোনের এমন মৃত্যুর খবরে ভোলার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস। নাতি-নাতনীর শোকে গ্রামের বাড়িতে কান্নায় বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তাদের দাদা। বিলাপ করে কাঁদছেন খেলার সাথী চাচাতো ভাই-বোনগুলো। একটি সুন্দর পরিবারে হঠাৎ ঝড়ের মতো নেমে আসা এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। দুই শিশু সন্তান হারিয়ে এক মুহূর্তেই যেন থেমে গেছে বাবা-মায়ের হাজারো স্বপ্ন ও সংসারের সমস্ত চলার গতি।

নিঝুমের চাচা হাসান জানান, সন্তানদের ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য ভালো স্কুলে পড়ালেখা করাবেন বলে ১৫-১৬ বছর আগে ভোলা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন নিরব। বাসা ভাড়া নেন উত্তরা দিয়াবাড়ি কামারপাড়া এলাকায়। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন কাছাকাছি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তাদের বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। শেষ হয়ে গেল একটি সুন্দর সংসার।

নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম ও তার ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি সর্বশেষ ২০২২ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভোলায় দাদার বেড়াতে এসেছিলেন।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post