বিএনপি নেতার গুদামে মিলল ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল

 

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে ৩০০ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার হয়েছে। খাদ্যপণ্যগুলো ছিল পৌর বিএনপির সভাপতি খোকন আহমেদের হেফাজতে। অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগে সেগুলো জব্দ করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাতে পৌর শহরের বাদে আঠারো বাড়ি এলাকার মেসার্স নাহার ট্রেডার্সের গুদামে এ অভিযান চলে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান বিএনপি নেতা খোকন।

অভিযানের তথ্য শনিবার দুপুরে নিশ্চিত করেন মদন উপজেলার অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জামিউল ইসলাম সাকিব। তিনি বলেন, অভিযানে বিএনপি নেতার মালিকানাধীন গুদাম থেকে অবৈধভাবে মজুত ১৩ সহস্রাধিক কেজি (৩০৪ বস্তা) সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খোকন কেন্দুয়া পৌরসভার বাদে আঠারো বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। এলাকায় তার মালিকানাধীন মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।পুলিশ, এলাকাবাসী ও সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ভিজিএফের মাধ্যমে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য দেওয়া বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেন বিএনপি নেতা খোকন এমন গোপন সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে একটি হ্যান্ডট্রলিতে করে এসব চাল গুদাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওই বিএনপি নেতা। এ সময় হ্যান্ডট্রলিটি বঙ্গানিয়া মোড় থেকে আটক করে পুনরায় গুদামের সামনে নেওয়া হয়। পরে গুদাম ও ট্রলিসহ মোট ৩০৪ বস্তা চাল জব্দ করা হয়, যার ওজন প্রায় ১৩ হাজার ৫১৫ কেজি। এসব চালের বাজারমূল্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।

অভিযানের সময় খোকন আহমেদকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এ কারণে তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

জব্দ করা চালের মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের পাটের বস্তা, টিসিবির বস্তা, নীল, সাদা ও হলুদ রঙের বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তা ছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে জব্দ করা চাল কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে। তবে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খোকনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, যা নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমালোচনা হচ্ছে।স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি ত্রাণের চাল মজুত করে রাখা এবং সরিয়ে ফেলার চেষ্টা যে উদ্দেশ্যেই হোক, তা একটি গুরুতর অপরাধ। অভিযুক্ত ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আইনগত পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে লেফনেন্যান্ট জামিউল ইসলাম সাকিব বলেন, জব্দ করা ৩০৪ বস্তায় সরকারি আতপ চাল ছিল। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য এসব চাল দেওয়া হয়েছিল। হ্যান্ডট্রলিতে নিচে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি বস্তা আর উপরে কিছু সাদা বস্তায় চালগুলো রেখে নিয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গে থাকা লোকজন বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে বলে বিতরণের পর বেঁচে যাওয়া এসব চাল তারা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কিনেছেন। অনুমতি থাকলে তারা চালগুলো এভাবে লুকিয়ে নিয়ে যাবে কেন এটাও প্রশ্ন। বেঁচে যাওয়া চাল বিক্রি করার নিয়ম আছে কি না, বিষয়টি জানতে হবে। এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ছুটিতে আছেন, ফিরলে ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি আরো বলেন, গুদামের মালিক বিএনপি নেতা খোকনকে মোবাইল ফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। উপস্থিত দুজনকে আটক করা হলেও তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত খোকনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, জব্দ করা চালগুলো উপজেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। শনিবার রাতে কর্মস্থলে ফিরে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post